সরকারী প্রকল্পের ঘর এর টাকা থেকে কাটমানি আদায় তৃণমূলের : আলোড়ন জামালপুর এর রাজনীতিতে

24th June 2020 9:35 pm বর্ধমান
সরকারী প্রকল্পের ঘর এর টাকা থেকে কাটমানি আদায় তৃণমূলের : আলোড়ন জামালপুর এর রাজনীতিতে


বাবু সিদ্ধান্ত ও পার্থ ব‍্যানার্জী (জামালপুর) : 

সরকারী প্রকল্পের সুবিধা বন্টন কিংবা অন্য কোন অছিলায় গরিব মানুষদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা যাবেনা। নিজের দলের নেতা ও কর্মীদের উদ্দেশ্যে এমনই   হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নিষেধ সত্ত্বেও তোলাবাজিতে লাগাম টানার কোন সদিচ্ছা দেখাতে চাইছে না পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বেরুগ্রাম অঞ্চলের তৃণমূল কর্মীরা ।হুমকি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার একাধীক উপভোক্তার কাছ থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে নেবার অভিযোগ উঠলো  বেরুগ্রাম অঞ্চলের  তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে । যা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন বেরুগ্রাম অঞ্চলের  বাসিন্দাা । তোলাবাজির সবিস্তার উল্লেখ করে তারা বিডিওর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন । 

               ছবি : মহম্মদ খান 

জামালপুর ব্লকের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম শম্ভুপুর ।২০১৯ -২০ অর্থ বর্ষে এই গ্রামের বেশ কিছু গরিব পরিবারেকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর অনুমোদন করে প্রশাসন । সরকারী নিয়ম অনুযায়ী বাড়ি তৈরির টাকা উপভোক্তাদের নামে থাকা ব্যাঙ্ক অ্যাউউন্টে জমা পড়ে । প্রথম কিস্তিতে  ৬০ হাজার ,দ্বিতীয় কিস্তিতে ৫০ হাজার ও তৃতীয় কিস্তিতে ১০ হাজার টাকা উপভোক্তাদের পাওয়ার কথা । এছাড়াও বাড়ি তৈরির মজুরি বাবাদ উপভোক্তাদের  পঞ্চায়েত থেকে  এনআরইজিস প্রকল্পে ৯০ দিনের কাজের মজুরি অর্থ পাবার সংস্থান রয়েছে । 

শম্ভুপুর গ্রামের উপভোক্তারা বলেন, বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা তাঁদের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ার খবর আগাম পৌছে যায় এলাকার তৃণমূল কর্মীদের কাছে।  এরপরেই ওই টাকা থেকে মোটা অংকের টাকা 
ভাগ দিতে হবে বলে এলাকায় তৃণমূল কর্মীরা দাবি করতে শুরু করে । 

বিডিওকে লিখিত অভিযোগে  শম্ভুপুর গ্রামের উপভোক্তারা জানিয়েছেন, প্রথম কিস্তির টাকা ঢোকার পরেই শম্ভুপুর গ্রামের ১ ও ২ নম্বর সংসদের তৃণমূল কর্মী তাপস মণ্ডল ,অভিজিৎ অধিকারী ও মানিক রুইদাস তাঁদের বাড়িতে আসে । টাকার জন্য চাপসৃষ্টি করা শুরু করে ।  তাপস  ,অভিজিৎ ও মানিক কোন উপভোক্তার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করে ।আবার কারুর কাছে  ১০ হাজার টাকা দাবি করে । ওই তৃণমূল কর্মীরা হুমকি দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে  তাঁদের কারুর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা । আবার কারুর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা আদায় করে নিয়েগেছে । বুধবার কয়েকজন উপভোক্তা আবার জানালেন, গ্রামের ওই তৃণমূল কর্মীরা চাপ সৃষ্টি করে এলাকার প্রায় ২৮-৩০ জন উপভোক্তার কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে। কারুর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে নিয়েগেছে । তৃণমূল কর্মীরা টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় বাড়ি তৈরির কাজ থমকে গেছে বলে উপভোক্তারা বিডিওকে জানিয়েছে । একই সঙ্গে তারা টাকা ফেরৎ পাবার ব্যবস্থা করেদেবার জন্য বিডির কাছে আর্জি জানিয়েছেন । 

 বুধবার বেলায় শম্ভুপুর গ্রামে পৌছে দেখাযায় 
সমস্ত উপভোক্তাদের বাড়ি তৈরির কাজই থমকে রয়েছে ।কেন বাড়ি তৈরির কাজ থমকে রয়েছে তা জানতে চাওয়া হয় উপভোক্তা পদ্মা ক্ষেত্রপালের কাছে । উত্তরে তিনি বলেন , বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির সরকারী টাকা ঢোকার পরেই তৃণমূল কর্মী অভিজিৎ  ১০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে চাপসৃষ্টি করে । পদ্মাদেবী বলেন , তিনি টাকা দিতে চাননি । কিন্তু অভিজিৎ হুঁশিয়ারি দেয় ওকে টাকা না দিলে বাড়ি তৈরির পরের কিস্তির টাকা আর ঢুকবে না । সেই ভয়ে অভিজিৎকে ৫ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে পদ্মাদেবী বলেন । অপর অপভোক্তা পরিবারে বধূ  ছায়া রুইদাস বলন , একই রকম ভাবে চাপ সৃষ্টি করে তৃণমৃল কর্মি মানিক রুইদাস তার স্বামীর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করেছে । এছাড়াও অধর ক্ষেত্রপাল বলেন, তৃণমূল কর্মী বাবলু মণ্ডল তার কাছথেকে ৫ হাজার টাকা আদায় করে নিয়ে গেছে ।  পরের কিস্তির টাকা ঢুকলে বাকি ৫ হাজার টাকা দিতে হবে বলে বাবলু জানিয়ে দিয়েছে । মদন রুইদাস বলেন, তৃণমূল কর্মী মানিক তাঁর কাছ থেকে জোরপূর্বক
১০ হাজার টাকা আদায় করেছে ।

তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ  
করেছেন উপভোক্তা সুশান্ত রুইদাস। তিনি  বলেন ,“তাঁদের পাড়ার ১৭ জনের নামে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর অনুমোদন হয়েছে । ঘরের প্রথম কিস্তির টাকা ঢোকার পর  ১৭ টি পরিবারের কাছ থেকেই মোটা টাকা আদায় করেছে তৃণমূল কর্মী তাপস , মানিক , অভিজিৎ ও বাবলুরা । ওরা সবাইকে হুমকি দিয়েই ওই টাকা আদায় করেছে । ওই তৃণমূল কর্মীরা বলেছিল ,ওদের টাকা না দিলে পরের কিস্তির টাকা আর কারুর অ্যাকাউন্টে ঢুকবে না। ওরা টাকা আটকে দেবে বলায় সবাই ভয়ে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে । টাকার ঘাটতির জন্য এখন সবার ঘর তৈরি থমকে রয়েছে । সুশান্ত বলেন , তারা গ্রামের কয়েকজন যখন এই তোলাবাজির বিষয়টি বিডিওকে জানাতে যাচ্ছিলেন তখন ওই তৃণমূল কর্মীরা পথ আটকে তাঁদের মারধোর করে । বিডিও অফিস যেতে দেয়নি । পরে জীবন বাজি রেখে তারা বিডিওর কাছে অভিযোগ জানিয়ে সুবিচার প্রার্থনা করেছেন । এদিকে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা এদিন শম্ভুপুর গ্রামে পৌছাতেই অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীরা অনেকেই গা ঢাকা দেন । শুধুমাত্র মানিক রুইদাসের দেখা পাওয়া যায় । চারজন  উপভোক্তাদের কাছথেকে টাকা নেবার কথা তিনি স্বীকার করেনেন ।তিনি  ৩ জনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে এবং একজনের  কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন বলে জানান । মানিক বলেন ,তৃণমূল পার্টির তরফে তাঁরা কয়েকজন কর্মী সিদ্ধান্ত নিয়েই টাকা আদায় করেছেন ।বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সেখ সাহাবুদ্দিন ওরফে দানি এই ঘটনা ধামাচাপা দেবার জন্য এদিন  সর্বত ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যান । তবে অবশ্য তাঁকে নিরাশই হতে হয় । বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন , “অভিযোগ পেয়েছি । অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে । 
অভিযোগের সত্যতা মিললে যারা টাকা নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে । ”

ছবি : মহম্মদ খান 





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।