বাবু সিদ্ধান্ত ও পার্থ ব্যানার্জী (জামালপুর) :
সরকারী প্রকল্পের সুবিধা বন্টন কিংবা অন্য কোন অছিলায় গরিব মানুষদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা যাবেনা। নিজের দলের নেতা ও কর্মীদের উদ্দেশ্যে এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নিষেধ সত্ত্বেও তোলাবাজিতে লাগাম টানার কোন সদিচ্ছা দেখাতে চাইছে না পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বেরুগ্রাম অঞ্চলের তৃণমূল কর্মীরা ।হুমকি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার একাধীক উপভোক্তার কাছ থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে নেবার অভিযোগ উঠলো বেরুগ্রাম অঞ্চলের তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে । যা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন বেরুগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দাা । তোলাবাজির সবিস্তার উল্লেখ করে তারা বিডিওর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন ।
ছবি : মহম্মদ খান
জামালপুর ব্লকের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম শম্ভুপুর ।২০১৯ -২০ অর্থ বর্ষে এই গ্রামের বেশ কিছু গরিব পরিবারেকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর অনুমোদন করে প্রশাসন । সরকারী নিয়ম অনুযায়ী বাড়ি তৈরির টাকা উপভোক্তাদের নামে থাকা ব্যাঙ্ক অ্যাউউন্টে জমা পড়ে । প্রথম কিস্তিতে ৬০ হাজার ,দ্বিতীয় কিস্তিতে ৫০ হাজার ও তৃতীয় কিস্তিতে ১০ হাজার টাকা উপভোক্তাদের পাওয়ার কথা । এছাড়াও বাড়ি তৈরির মজুরি বাবাদ উপভোক্তাদের পঞ্চায়েত থেকে এনআরইজিস প্রকল্পে ৯০ দিনের কাজের মজুরি অর্থ পাবার সংস্থান রয়েছে ।
শম্ভুপুর গ্রামের উপভোক্তারা বলেন, বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা তাঁদের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ার খবর আগাম পৌছে যায় এলাকার তৃণমূল কর্মীদের কাছে। এরপরেই ওই টাকা থেকে মোটা অংকের টাকা
ভাগ দিতে হবে বলে এলাকায় তৃণমূল কর্মীরা দাবি করতে শুরু করে ।
বিডিওকে লিখিত অভিযোগে শম্ভুপুর গ্রামের উপভোক্তারা জানিয়েছেন, প্রথম কিস্তির টাকা ঢোকার পরেই শম্ভুপুর গ্রামের ১ ও ২ নম্বর সংসদের তৃণমূল কর্মী তাপস মণ্ডল ,অভিজিৎ অধিকারী ও মানিক রুইদাস তাঁদের বাড়িতে আসে । টাকার জন্য চাপসৃষ্টি করা শুরু করে । তাপস ,অভিজিৎ ও মানিক কোন উপভোক্তার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করে ।আবার কারুর কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করে । ওই তৃণমূল কর্মীরা হুমকি দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে তাঁদের কারুর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা । আবার কারুর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা আদায় করে নিয়েগেছে । বুধবার কয়েকজন উপভোক্তা আবার জানালেন, গ্রামের ওই তৃণমূল কর্মীরা চাপ সৃষ্টি করে এলাকার প্রায় ২৮-৩০ জন উপভোক্তার কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে। কারুর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে নিয়েগেছে । তৃণমূল কর্মীরা টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় বাড়ি তৈরির কাজ থমকে গেছে বলে উপভোক্তারা বিডিওকে জানিয়েছে । একই সঙ্গে তারা টাকা ফেরৎ পাবার ব্যবস্থা করেদেবার জন্য বিডির কাছে আর্জি জানিয়েছেন ।
বুধবার বেলায় শম্ভুপুর গ্রামে পৌছে দেখাযায়
সমস্ত উপভোক্তাদের বাড়ি তৈরির কাজই থমকে রয়েছে ।কেন বাড়ি তৈরির কাজ থমকে রয়েছে তা জানতে চাওয়া হয় উপভোক্তা পদ্মা ক্ষেত্রপালের কাছে । উত্তরে তিনি বলেন , বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির সরকারী টাকা ঢোকার পরেই তৃণমূল কর্মী অভিজিৎ ১০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে চাপসৃষ্টি করে । পদ্মাদেবী বলেন , তিনি টাকা দিতে চাননি । কিন্তু অভিজিৎ হুঁশিয়ারি দেয় ওকে টাকা না দিলে বাড়ি তৈরির পরের কিস্তির টাকা আর ঢুকবে না । সেই ভয়ে অভিজিৎকে ৫ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে পদ্মাদেবী বলেন । অপর অপভোক্তা পরিবারে বধূ ছায়া রুইদাস বলন , একই রকম ভাবে চাপ সৃষ্টি করে তৃণমৃল কর্মি মানিক রুইদাস তার স্বামীর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করেছে । এছাড়াও অধর ক্ষেত্রপাল বলেন, তৃণমূল কর্মী বাবলু মণ্ডল তার কাছথেকে ৫ হাজার টাকা আদায় করে নিয়ে গেছে । পরের কিস্তির টাকা ঢুকলে বাকি ৫ হাজার টাকা দিতে হবে বলে বাবলু জানিয়ে দিয়েছে । মদন রুইদাস বলেন, তৃণমূল কর্মী মানিক তাঁর কাছ থেকে জোরপূর্বক
১০ হাজার টাকা আদায় করেছে ।
তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ
করেছেন উপভোক্তা সুশান্ত রুইদাস। তিনি বলেন ,“তাঁদের পাড়ার ১৭ জনের নামে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর অনুমোদন হয়েছে । ঘরের প্রথম কিস্তির টাকা ঢোকার পর ১৭ টি পরিবারের কাছ থেকেই মোটা টাকা আদায় করেছে তৃণমূল কর্মী তাপস , মানিক , অভিজিৎ ও বাবলুরা । ওরা সবাইকে হুমকি দিয়েই ওই টাকা আদায় করেছে । ওই তৃণমূল কর্মীরা বলেছিল ,ওদের টাকা না দিলে পরের কিস্তির টাকা আর কারুর অ্যাকাউন্টে ঢুকবে না। ওরা টাকা আটকে দেবে বলায় সবাই ভয়ে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে । টাকার ঘাটতির জন্য এখন সবার ঘর তৈরি থমকে রয়েছে । সুশান্ত বলেন , তারা গ্রামের কয়েকজন যখন এই তোলাবাজির বিষয়টি বিডিওকে জানাতে যাচ্ছিলেন তখন ওই তৃণমূল কর্মীরা পথ আটকে তাঁদের মারধোর করে । বিডিও অফিস যেতে দেয়নি । পরে জীবন বাজি রেখে তারা বিডিওর কাছে অভিযোগ জানিয়ে সুবিচার প্রার্থনা করেছেন । এদিকে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা এদিন শম্ভুপুর গ্রামে পৌছাতেই অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীরা অনেকেই গা ঢাকা দেন । শুধুমাত্র মানিক রুইদাসের দেখা পাওয়া যায় । চারজন উপভোক্তাদের কাছথেকে টাকা নেবার কথা তিনি স্বীকার করেনেন ।তিনি ৩ জনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে এবং একজনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন বলে জানান । মানিক বলেন ,তৃণমূল পার্টির তরফে তাঁরা কয়েকজন কর্মী সিদ্ধান্ত নিয়েই টাকা আদায় করেছেন ।বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সেখ সাহাবুদ্দিন ওরফে দানি এই ঘটনা ধামাচাপা দেবার জন্য এদিন সর্বত ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যান । তবে অবশ্য তাঁকে নিরাশই হতে হয় । বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন , “অভিযোগ পেয়েছি । অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে ।
অভিযোগের সত্যতা মিললে যারা টাকা নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে । ”
ছবি : মহম্মদ খান